কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র গুলো নারীর প্রজনন স্বাস্থ্যের উপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলেছে

  • Reporter Name
  • Update Time : ০১:১৭:৪০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৯ মার্চ ২০২৫
  • ৫ Time View

মোঃ মিজানুর রহমান সাগর

বাগেরহাট প্রতিনিধি

আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৫ উপলক্ষে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে নারীর অংশগ্রহণ, ক্ষমতায়ন, জ্বালানি অধিকার নিশ্চিতকরণ এবং নীতি নির্ধারক হিসেবে নারীর ভূমিকা মূল্যায়নের দাবীতে মোংলায় এক ব্যতিক্রমী প্রচারাভিযানের আয়োজন করা হয়।

এ উপলক্ষে শনিবার (৮ মার্চ) সকাল ১১টায় মোংলার চিলা বাজারে উপকূলীয় নারীদের অংশগ্রহণে “বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাতে নারীর ক্ষমতায়নঃ টেকসই উন্নয়নে জ্বালানি নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করো” শীর্ষক উঠানবৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।  মোংলা নাগরিক সমাজ , ক্লিন (কোস্টাল লাইভলিহুড এন্ড এনভায়রনমেন্টাল একশন নেটওয়ার্ক) ও বিডাব্লিউজিইডি (বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ইকোলজি এন্ড ডেভেলপমেন্ট) এর যৌথ  আয়োজনে এ উঠানবৈঠকের মূল লক্ষ্য ছিল সারাদেশে শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিশ্চিত করে নারীদের জ্বালানি নিরাপত্তা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।

উঠানবৈঠকে বক্তারা বলেন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র গুলোর বিষাক্ত ধাতু নারীর প্রজনন স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে জ্বালানি খাতে নারীর সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে এবং সকল স্তরে জ্বালানির ন্যায়সঙ্গত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। উঠানবৈঠকে বক্তারা নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসাারের প্রয়োজনীয়তা ও বিদ্যুৎ খাতে নারীর অন্তর্ভূক্তির বিষয়ে সচেতনতামূলক বার্তা তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠিত উঠানবৈঠকে সভাপতিত্ব ও প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন মোংলা নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মোঃ নূর আলম শেখ।

উঠানবৈঠকে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন, নারীনেত্রী কমলা সরকার, চন্দ্রিকা মন্ডল, রত্না শেখ, তন্বীমন্ডল, পরিবেশকর্মী হাছিব সরদার ও ইয়ুথ লিডার মেহেদী হাসান।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মোংলা নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মোঃ নূর আলম শেখ বলেন, দেশে ব্যবহৃত মোট জ্বালানির ৪৬ শতাংশই ব্যবহার হয় গৃহাস্থলির কাজে অর্থাৎ নারীরাই সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করছেন কিন্তু আমদানিকৃত জীবাশ্ম জ্বালানির ফলে প্রতিনিয়ত বিদ্যুৎ এর মূল্য বৃদ্ধির কারণে তারাই সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছেন।

তিনি আরো বলেন, নারীরা জ্বালানি খাতে পরিকল্পনা থেকে বাস্তবায়ন, উৎপাদন থেকে বিতরণ সব ক্ষেত্রেই বঞ্চিত। সারাদেশে নারীদের মালিকানায় মাত্র ২-৪ শতাংশ জমি থাকায় বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের এড়িয়ে যান এবং পরামর্শ গ্রহণ প্রক্রিয়ায় শুধুমাত্র সুবিধাভোগী হিসেবে তাদেরদের অন্তর্ভুক্ত করেন এবং ‘সংবেদনশীল বিষয়’ হিসেবে দেখেন, কিন্তু সক্রিয় অংশীদার বা নীতিনির্ধারক হিসেবে নারীদের স্বীকৃতি দেওয়া হয় না।

নারী দিবসের উঠানবৈঠকে নারীনেত্রী কমলা সরকার বলেন, ফসিল ফুয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র গুলোর কারণে নারীরা মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হন, কারণ পুরুষদের মতো তারা সহজে স্থানান্তরিত হতে পারেন না। স্থানীয় এলাকায় বহিরাগতদের ভিড়ের কারণে তারা চলাচল, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন এবং মৌলিক প্রয়োজন পূরণে অসুবিধার সম্মুখীন হন। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান গুলোকে এসব সমস্যা সমাধানে খুব বেশি তৎপর হতে দেখা যায় না। সাধারণত পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন (EIA) প্রক্রিয়ার বাধ্যতামূলক শর্ত পূরণের জন্যই নারীদের নামমাত্র পরামর্শ প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

উঠানবৈঠকে নারীনেত্রী রত্না শেখ বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সবসময় নারীদের বিশেষ প্রয়োজন, বিশেষ করে প্রজনন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়গুলোকে সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করেন। জীবাশ্ম জ্বালানি ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বিশেষ করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র গুলো মাত্রাতিরিক্ত পারদ, সীসা, ক্যাডমিয়াম, সালফার ও ক্রোমিয়াম নির্গত করে। এই বিষাক্ত ধাতুগুলো নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্যের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলে। নারীরা এই দূষণের সরাসরি ও নিরীহ শিকার হলেও তাদের কোনো ক্ষতিপূরণের অধিকার নেই, কারণ তাদের নামে জমির মালিকানা থাকে না।

উঠানবৈঠকে বক্তারা নারীদের জন্য সহজে সোলার হোম সিস্টেম স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারের কাছে আহ্বান জানান।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

মহাদেবপুরে নকল ও ভেজাল কৃষি উপকরণের ক্ষতিকর প্রভাব বিষয়ে সচেতনতামূলক সভা

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র গুলো নারীর প্রজনন স্বাস্থ্যের উপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলেছে

Update Time : ০১:১৭:৪০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৯ মার্চ ২০২৫

মোঃ মিজানুর রহমান সাগর

বাগেরহাট প্রতিনিধি

আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৫ উপলক্ষে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে নারীর অংশগ্রহণ, ক্ষমতায়ন, জ্বালানি অধিকার নিশ্চিতকরণ এবং নীতি নির্ধারক হিসেবে নারীর ভূমিকা মূল্যায়নের দাবীতে মোংলায় এক ব্যতিক্রমী প্রচারাভিযানের আয়োজন করা হয়।

এ উপলক্ষে শনিবার (৮ মার্চ) সকাল ১১টায় মোংলার চিলা বাজারে উপকূলীয় নারীদের অংশগ্রহণে “বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাতে নারীর ক্ষমতায়নঃ টেকসই উন্নয়নে জ্বালানি নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করো” শীর্ষক উঠানবৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।  মোংলা নাগরিক সমাজ , ক্লিন (কোস্টাল লাইভলিহুড এন্ড এনভায়রনমেন্টাল একশন নেটওয়ার্ক) ও বিডাব্লিউজিইডি (বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ইকোলজি এন্ড ডেভেলপমেন্ট) এর যৌথ  আয়োজনে এ উঠানবৈঠকের মূল লক্ষ্য ছিল সারাদেশে শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিশ্চিত করে নারীদের জ্বালানি নিরাপত্তা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।

উঠানবৈঠকে বক্তারা বলেন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র গুলোর বিষাক্ত ধাতু নারীর প্রজনন স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে জ্বালানি খাতে নারীর সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে এবং সকল স্তরে জ্বালানির ন্যায়সঙ্গত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। উঠানবৈঠকে বক্তারা নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসাারের প্রয়োজনীয়তা ও বিদ্যুৎ খাতে নারীর অন্তর্ভূক্তির বিষয়ে সচেতনতামূলক বার্তা তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠিত উঠানবৈঠকে সভাপতিত্ব ও প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন মোংলা নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মোঃ নূর আলম শেখ।

উঠানবৈঠকে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন, নারীনেত্রী কমলা সরকার, চন্দ্রিকা মন্ডল, রত্না শেখ, তন্বীমন্ডল, পরিবেশকর্মী হাছিব সরদার ও ইয়ুথ লিডার মেহেদী হাসান।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মোংলা নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মোঃ নূর আলম শেখ বলেন, দেশে ব্যবহৃত মোট জ্বালানির ৪৬ শতাংশই ব্যবহার হয় গৃহাস্থলির কাজে অর্থাৎ নারীরাই সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করছেন কিন্তু আমদানিকৃত জীবাশ্ম জ্বালানির ফলে প্রতিনিয়ত বিদ্যুৎ এর মূল্য বৃদ্ধির কারণে তারাই সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছেন।

তিনি আরো বলেন, নারীরা জ্বালানি খাতে পরিকল্পনা থেকে বাস্তবায়ন, উৎপাদন থেকে বিতরণ সব ক্ষেত্রেই বঞ্চিত। সারাদেশে নারীদের মালিকানায় মাত্র ২-৪ শতাংশ জমি থাকায় বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের এড়িয়ে যান এবং পরামর্শ গ্রহণ প্রক্রিয়ায় শুধুমাত্র সুবিধাভোগী হিসেবে তাদেরদের অন্তর্ভুক্ত করেন এবং ‘সংবেদনশীল বিষয়’ হিসেবে দেখেন, কিন্তু সক্রিয় অংশীদার বা নীতিনির্ধারক হিসেবে নারীদের স্বীকৃতি দেওয়া হয় না।

নারী দিবসের উঠানবৈঠকে নারীনেত্রী কমলা সরকার বলেন, ফসিল ফুয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র গুলোর কারণে নারীরা মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হন, কারণ পুরুষদের মতো তারা সহজে স্থানান্তরিত হতে পারেন না। স্থানীয় এলাকায় বহিরাগতদের ভিড়ের কারণে তারা চলাচল, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন এবং মৌলিক প্রয়োজন পূরণে অসুবিধার সম্মুখীন হন। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান গুলোকে এসব সমস্যা সমাধানে খুব বেশি তৎপর হতে দেখা যায় না। সাধারণত পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন (EIA) প্রক্রিয়ার বাধ্যতামূলক শর্ত পূরণের জন্যই নারীদের নামমাত্র পরামর্শ প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

উঠানবৈঠকে নারীনেত্রী রত্না শেখ বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সবসময় নারীদের বিশেষ প্রয়োজন, বিশেষ করে প্রজনন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়গুলোকে সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করেন। জীবাশ্ম জ্বালানি ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বিশেষ করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র গুলো মাত্রাতিরিক্ত পারদ, সীসা, ক্যাডমিয়াম, সালফার ও ক্রোমিয়াম নির্গত করে। এই বিষাক্ত ধাতুগুলো নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্যের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলে। নারীরা এই দূষণের সরাসরি ও নিরীহ শিকার হলেও তাদের কোনো ক্ষতিপূরণের অধিকার নেই, কারণ তাদের নামে জমির মালিকানা থাকে না।

উঠানবৈঠকে বক্তারা নারীদের জন্য সহজে সোলার হোম সিস্টেম স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারের কাছে আহ্বান জানান।