
চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিবেদক।।
ভোলা-৪ চরফ্যাশন ও মনপুরা আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপির দুই হেভিওয়েট নেতার পক্ষে পোস্টার, ফেস্টুন ও ব্যানারে ছেয়ে গেছে এবং পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করে আসছে তাদের নেতাকর্মীরা। এসব কর্মসূচিতে এক পক্ষ অপর পক্ষের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দখলদারি ও নানা অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগ করে আসছে। এ নিয়ে এলাকায় যেকোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে এ আসনটিতে।
মোনোনয়নপ্রত্যাশী দুই হেভিওয়েট নেতা হলেন, নব্বইয়ের গণ-আন্দোলনের নেতা চরফ্যাশন-মনপুরা আসনের বিএনপির সাবেক ৩ বারের সংসদ সদস্য ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মো.নাজিম উদ্দীন আলম। এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ও চরফ্যাশনের কৃতি সন্তান মো. নুরুল ইসলাম নয়ন।
চরফ্যাশনের সাবেক এমপি নাজিম উদ্দীন আলম এ আসনটি চতুর্থ বারের মতো মনোনয়ন পেয়ে ধরে রাখতে সচেষ্ট। আর কেন্দ্রীয় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন স্থানীয় ছেলে হিসেবে এ আসনটিতে প্রথম বারের মতো মনোনয়ন পেয়ে নেতৃত্ব দিতে চান।
এদিকে গত ৫ আগষ্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে বিএনপির প্রচারণা চালানো সহ নাজিম উদ্দীন আলমের পক্ষে সভা-সমাবেশ করে দল থেকে চতুর্থ বারের মতো নাজিম উদ্দীন আলম মনোনয়ন পেলে চরফ্যাশন ও মনপুরায় জয়ী হয়ে ব্যাপক উন্নয়ন করবেন বলে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন জণগণকে তার নেতাকর্মীরা।
অন্যদিকে গত ৫ আগষ্ট থেকে চরফ্যাশনে বিএনপির প্রচারণা চালানো সহ কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা নুরুল ইসলাম নয়নের পক্ষে তার নেতাকর্মীরা সভা-সমাবেশ করে স্থানীয় ছেলে হিসেবে এবং দল থেকে মনোনয়ন পেয়ে সংসদ নির্বাচিত হলে চরফ্যাশন ও মনপুরা এলাকায় দৃশ্যমান উন্নয়ন করবেন বলে জণগনকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
জানা যায়, সাবেক এমপি নাজিম উদ্দীন আলম গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন চরফ্যাশন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন মালতিয়া, উপজেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি আ.ন.ম আমিরুল ইসলাম মিন্টিজ মিয়া, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খাইরুল ইসলাম সোহেল, উপজেলা যুব দলের সাবেক সভাপতি দিফু ফরাজি, উপজেলা সেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মীর সায়েদ প্রমুখ।
অপর দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন গ্রুপের পক্ষে চরফ্যাশনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি কয়ছর আহমেদ কমল, উপজেলা বিএনপি’র সাবেক যুব বিষয়ক সম্পাদক আহসান উল্লাহ বাহার, উপজেলা বিএনপির পৌর কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম ভুট্টু, সেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক হুমায়ুন কবির সিকাদর, উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব জাহিদুল ইসলাম রাসেল, মো. সিরাজুল ইসলাম সবুজ খাঁন প্রমুখ।
নাজিম উদ্দীন আলমের নেতৃত্ব দেয়া চরফ্যাশন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন মালতিয়া জানান,
নাজিম উদ্দিন আলমের সবচেয়ে বড় শক্তি তৃণমূলের নেতৃত্ব তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তিনবার এমপি ও দীর্ঘ সময় চরফ্যাশন উপজেলা বিএনপির সভাপতি থাকায় নেতৃত্বের আগাগোড়া তার হাতেই তৈরি। তাছাড়া সাধারণ জনগণের মাঝে আলমের বেশ গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তাই আমরা বিশ্বাস করি আগামী নির্বাচনে নাজিম উদ্দীন আলমকে দল মনোনয়ন দিবে। আমরা তার পক্ষে চরফ্যাশনে কাজ করছি।
নুরুল ইসলাম নয়নের নেতৃত্ব দেয়া উপজেলা পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য আমিরুল ইসলাম ভুট্টু বলেন, চরফ্যাশন ও মনপুরা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দীন আলম এ আসনে তার আমলে উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করতে পারেননি। এমনকি দলের দুর্দিনে নেতাকর্মীদের খবরও রাখেননি তিনি। সবকিছু বিবেচনায় আগামী নির্বাচনে এ আসনে নাজিম উদ্দীন আলমের পরিবর্তে কেন্দ্রীয় জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়নকেই নিশ্চয়ই মনোনয়ন দেবে বিএনপি, আমরা বিশ্বাস করি। বর্তমানে চরফ্যাশন ও মনপুরায় বিএনপিতে ক্লিন ইমেজের নেতৃত্ব খুব প্রয়োজন। সেই হিসাবে নুরুল নয়নকে বিএনপির তৃনমুল পর্যায়ের নেতাকর্মী সহ জনসাধারণ চায়। তাই আমরা তার পক্ষে কাজ করছি।
সরেজমিনে দেখা যায়, চরফ্যাশনে বিএনপি এখন দুই ভাগে বিভক্ত। আলম ও নয়ন গ্রুপের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষ ও দলের অঙ্গ-সংগঠনগুলোর কমিটি গঠনসহ অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জর্জরিত হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি চরফ্যাশন উপজেলা বিএনপির মূলদল ও পৌর কমিটিকে বিলুপ্ত করা সহ চরফ্যাশন উপজেলা যুবদল, ছাত্রদল এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটিতে নয়নপন্থিরা পদ পাওয়ায় দলের তরুণ নেতাকর্মীদের মধ্যে নুরুল ইসলাম নয়নের বর্তমানে আধিপত্য বেড়েছে।
চরফ্যাশন উপজেলা বিএনপির তৃণমূলের একাধিক নেতা বলেছেন, দুই গ্রুপের নেতাকর্মীরা নিজেদের নেতৃত্ব টিকিয়ে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি করে এক গ্রুপ অপর গ্রুপের বিরুদ্ধে নানা কুৎসা রটাচ্ছে। এ নিয়ে এলাকায় সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যেকোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে। এতে দলের সাধারণ নেতাকর্মীরা দিন দিন হতাশ হয়ে পড়ছেন। সব মিলিয়ে এ আসনে বিএনপি এখন কোন্দলে জর্জরিত হয়ে পড়েছে।
চরফ্যাশন ও মনপুরা আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দীন আলম বলেন, প্রায় ১৬ বছর আমাদের ওপর নির্যাতনের স্টিম রোলার চালিয়েছে আওয়ামী লীগ। গত ৫ আগষ্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতন হয়েছে। এখন আমাদের কাজ হচ্ছে দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করার। আমি চরফ্যাশন ও মনপুরা আসনের নেতাকর্মীদেরকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা মতে কোনো দখল বা চাঁদাবাজির দায় বিএনপি নেবে না এই বলে সতর্ক করে দিয়েছি। তাদের বলে দিয়েছি এতদিন ধৈর্য ধরেছেন আর কিছুদিন ধৈর্য ধরে কাজ করুন। তিনি আরো বলেন, রাজপথে বহু আন্দোলন সংগ্রাম করে মামলা-হামলার স্বীকার হয়েছি। তারপরও রাজপথ থেকে সরে যাই নাই। এসব কিছু বিবেচনা করলে আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে দল অবশ্যই চরফ্যাশন ও মনপুরা আসনে আমাকে মনোনয়ন দেবে। তাছাড়া চরফ্যাশন ও মনপুরা আসনে বিএনপির কোনো বিভেদ বা গ্রুপ চাইনা। আমরা সবাই এক এবং দলের স্বার্থে সবাই ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করতে হবে। দল যাকে মনোনয়ন দিবে তার হয়েই বিএনপির নেতাকর্মীরা কাজ করবে।
চরফ্যাশন ও মনপুরা আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী নুরুল ইসলাম নয়ন বলেন, গত ৫ আগষ্ট স্বৈরাচার সরকার শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে
চরফ্যাশন ও মনপুরা আসনে আমার পক্ষের নেতাকর্মীদেরকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় মতে আমি কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলে দিয়েছি যে-দখলদার, ও চাঁদাবাজদের স্থান বিএনপিতে নেই। তারা বিএনপি বা অঙ্গ সংগঠনের কেউ নন। সেই নির্দেশনা মতে নেতাকর্মীরা সভা-সমাবেশ ও কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, আমি চরফ্যাশনের স্থানীয় সন্তান এবং রাজপথে বহু আন্দোলন সংগ্রাম করে হামলা-মামলার খেয়েছি। দলের জন্য বহু ত্যাগ স্বীকার করেছি। বর্তমানে কেন্দ্রীয় যুবদলের নেতৃত্ব দিচ্ছি। আমি আশা করি, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তথা দলের সর্বোচ্চ কমান্ড এসব বিষয় নিশ্চয়ই বিবেচনা করবেন। আমি দলের কাছে মনোনয়ন চাইব। দল এ আসনে অবশ্যই আমাকে মনোনয়ন দিবে বলে আমি বিশ্বাস করি। তাছাড়া আমি চরফ্যাশনে বিএনপির কোনো হিংসা বিভেদ বা গ্রুপ চাইনা। আমরা দলের স্বার্থে সবাই ঐক্যবদ্ধ। এবং নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ব থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছি। দল যাকে মনোনয়ন দিবে তার হয়েই আমরা আগামীতে কাজ করবো।
চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্র জানা যায়, এই দুই উপজেলা নিয়ে ভোলা-৪ আসন গঠিত। ১টি পৌরসভা, ৫টি থানা এবং ২৬ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত হয় এ আসন। মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৬০ হাজার ৪৩৫ জন।
ছবি সংযুক্ত:- সাবেক এমপি নাজিম উদ্দীন আলম ও কেন্দ্রীয় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন।
বার্তা প্রেরক
হাসান লিটন
চরফ্যাশন, ভোলা
০১৭২৪৯৫৯৯৮৩