শ্যামনগরে জনস্বাস্থ্যের বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ প্রকল্পে পানির ট্যাংকিতে হরিলুট

  • Reporter Name
  • Update Time : ১১:০৩:০৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫
  • ১৪ Time View

মোঃ আলফাত হোসেনঃ

সুপেয় পানির সংকটে শ্যামনগরের মানুষ এখন দিশেহারা।দৈনন্দিন একটি পরিবারে পানযোগ্য পানির যে পরিমাণ চাহিদা, অনেক পরিবারের পক্ষেই তা পুরোপুরি মেটানো মোটেই সম্ভব হচ্ছে না সাতক্ষীরার উপকূলে।

৮ হাজার ৮৫০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা খরচ করে সুপেয় পানির প্রকল্প হাতে নেয় আওয়ামী সরকার। যেখানে অসহায়, গরীব আর পিছিয়ে পড়া মানুষকে স্বল্প মূল্যে নিরাপদ পানি দেওয়ার কথা ছিল। বরাদ্ধের হাজার হাজার কোটি টাকা অপচয় করে সরকারি কর্মকর্তা, এমপি ও দলীয় লোকজনই হয়েছেন লাভবান।
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে সুপেয় পানিসহ দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারযোগ্য পানির সংকট নতুন কিছু নয়। এই সংকট নিরসনে সরকার শত শত কোটি টাকা খরচ করলেও তার সুফল পাচ্ছে না প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের একাধিক প্রকল্প শুধু টাকা খরচের মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। যে তিমিরে রয়েছে, সেই তিমিরেই থেকে যাচ্ছে সংকট। মাঝে কোটিপতি বনে যাচ্ছেন দুর্নীতির সিন্ডিকেটের সদস্যরা।
সূত্র মতে, শ্যামনগর উপকূলীয় এলাকায় সুপেয় পানি সংকট নিরসনে ‘সমগ্রদেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্প’ ও ‘উপকূলীয় জেলাসমূহে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে পানি সরবরাহ’ নামে দুটি প্রকল্পের আওতায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে ৩ হাজার লিটারের পানি সংরক্ষণের ট্যাংক ও অন্যান্য সরঞ্জামাদিসহ স্থাপন করা হচ্ছে। এসব প্রকল্পের আওতায় সরকারের উপকারভোগী প্রতি ব্যয় প্রায় ৪২ হাজার ২০০ টাকা (ভ্যাট ট্যাক্সসহ)। তবে সরকারি বরাদ্দের এই পানির ট্যাংক বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের সহযোগিতায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের টেকনিশিয়ান দাবি করা ঠিকাদারের প্রতিনিধি নজরুল ইসলাম ও তার সহযোগীরা সমাজের বিত্তবান ও স্বচ্ছল চাকরীজীবীদের কাছে ১২ থেকে ১৭ হাজার টাকায় ফেরি করে বিক্রি করছেন এসব ট্যাংক। এই অনিয়মের সাথে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও জড়িত বলে অভিযোগ এলাকাবাসী। ফলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ঠিকাদার প্রতিনিধির যোগসাজশে সরকারের কোটি কোটি টাকা তছরুপ হচ্ছে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে শ্যামনগর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সাবেক সংসদ সদস্য ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে যে তালিকা পাওয়া গেছে সেই তালিকা অনুযায়ীই ট্যাংকি বিতরণ করা হচ্ছে। আমাদের দুর্নীতির কোন সুযোগ নেই।

তার সাথে সুরে সুর মিলিয়ে কাজের ঠিকাদার প্রতিনিধি নজরুল ইসলাম বলেন, অফিস থেকে যে তালিকা দেয়া হয়েছে, সেই তালিকা অনুযায়ী আমরা ট্যাংকি বিতরণ করছি।
তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, খাবার পানি সংকটে থাকা প্রকৃত অসহায় দরিদ্র মানুষের পরিবর্তে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বিত্তবান ও চাকরিজীবীদের মাঝে অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে পানির ট্যাংকি বিতরণ করা হয়েছে।
অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ের ট্যাংকি পাওয়া বিত্তবান ও চাকরিজীবীদের দাবি, তিন হাজার লিটারের একটি পানির ট্যাংক দোকানে কিনতে গেলে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা লাগে। কিন্তু ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে শুনে তাদের কাছ থেকে ক্রয় করেছেন তাঁরা।

বঙ্গোপসাগরের সন্নিকটে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তবর্তী জেলা সাতক্ষীরার সর্বশেষ উপজেলা শ্যামনগর। সমুদ্রঘেঁষা হওয়ায় এই উপজেলার অধিকাংশ এলাকার পানি লবণাক্ত। তাই বসানো যায় না গভীর নলকূপও। বর্ষাকালে পানিতে লবণাক্ততা কম থাকলেও শুকনো মৌসুমে মানুষকে মারাত্মক কষ্ট পোহাতে হয়। দৈনন্দিন কাজকর্ম সারতে ও পান করতে তখন একমাত্র অবলম্বন পুকুর এবং ধরে রাখা বৃষ্টির পানি। অথচ সেই পানির কষ্টে থাকা উপকূলের গরীব অসহায় মানুষই পাচ্ছে না সরকারের এই সুবিধা। অর্থের বিনিময়ে সরকারের এই মহৎ উদ্যোগকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
উপকূলীয় অঞ্চলের সাধারণ মানুষের সুপেয় পানির কষ্ট দূর করতে সমগ্রদেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ ও উপকূলীয় জেলাসমূহে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে পানি সরবরাহ নামে দুইটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। এই প্রকল্পের আওতায় উপকারভোগীদের বাড়িতে তিন হাজার লিটার বৃষ্টির পানি ধারণক্ষমতার পানির ট্যাংক ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি স্থাপন করা হয়। এজন্য উপকারভোগীদের ১ হাজার ৫০০ টাকা হারে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হয়।
কিন্তু শ্যামনগরে এজন্য উপকারভোগীদের গুনতে হচ্ছে ১০ থেকে ১৭ হাজার টাকা পর্যন্ত। যা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ ঠিকাদারের প্রতিনিধি ও তার লোকজন নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ফলে প্রকৃত উপকারভোগীরা বঞ্চিত হলেও বিত্তবানরা ১২ থেকে ১৭ হাজার টাকার বিনিময়ে একের অধিক সরকারি ট্যাংক ক্রয় করছেন। অথচ ট্যাংকের গায়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সতর্কবার্তা হিসেবে লেখা আছে, ‘জলধারাটি ক্রয় ও বিক্রয় সমভাবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

বাগেরহাটে বিএনপি নেতার  নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

শ্যামনগরে জনস্বাস্থ্যের বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ প্রকল্পে পানির ট্যাংকিতে হরিলুট

Update Time : ১১:০৩:০৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫

মোঃ আলফাত হোসেনঃ

সুপেয় পানির সংকটে শ্যামনগরের মানুষ এখন দিশেহারা।দৈনন্দিন একটি পরিবারে পানযোগ্য পানির যে পরিমাণ চাহিদা, অনেক পরিবারের পক্ষেই তা পুরোপুরি মেটানো মোটেই সম্ভব হচ্ছে না সাতক্ষীরার উপকূলে।

৮ হাজার ৮৫০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা খরচ করে সুপেয় পানির প্রকল্প হাতে নেয় আওয়ামী সরকার। যেখানে অসহায়, গরীব আর পিছিয়ে পড়া মানুষকে স্বল্প মূল্যে নিরাপদ পানি দেওয়ার কথা ছিল। বরাদ্ধের হাজার হাজার কোটি টাকা অপচয় করে সরকারি কর্মকর্তা, এমপি ও দলীয় লোকজনই হয়েছেন লাভবান।
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে সুপেয় পানিসহ দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারযোগ্য পানির সংকট নতুন কিছু নয়। এই সংকট নিরসনে সরকার শত শত কোটি টাকা খরচ করলেও তার সুফল পাচ্ছে না প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের একাধিক প্রকল্প শুধু টাকা খরচের মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। যে তিমিরে রয়েছে, সেই তিমিরেই থেকে যাচ্ছে সংকট। মাঝে কোটিপতি বনে যাচ্ছেন দুর্নীতির সিন্ডিকেটের সদস্যরা।
সূত্র মতে, শ্যামনগর উপকূলীয় এলাকায় সুপেয় পানি সংকট নিরসনে ‘সমগ্রদেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্প’ ও ‘উপকূলীয় জেলাসমূহে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে পানি সরবরাহ’ নামে দুটি প্রকল্পের আওতায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে ৩ হাজার লিটারের পানি সংরক্ষণের ট্যাংক ও অন্যান্য সরঞ্জামাদিসহ স্থাপন করা হচ্ছে। এসব প্রকল্পের আওতায় সরকারের উপকারভোগী প্রতি ব্যয় প্রায় ৪২ হাজার ২০০ টাকা (ভ্যাট ট্যাক্সসহ)। তবে সরকারি বরাদ্দের এই পানির ট্যাংক বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের সহযোগিতায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের টেকনিশিয়ান দাবি করা ঠিকাদারের প্রতিনিধি নজরুল ইসলাম ও তার সহযোগীরা সমাজের বিত্তবান ও স্বচ্ছল চাকরীজীবীদের কাছে ১২ থেকে ১৭ হাজার টাকায় ফেরি করে বিক্রি করছেন এসব ট্যাংক। এই অনিয়মের সাথে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও জড়িত বলে অভিযোগ এলাকাবাসী। ফলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ঠিকাদার প্রতিনিধির যোগসাজশে সরকারের কোটি কোটি টাকা তছরুপ হচ্ছে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে শ্যামনগর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সাবেক সংসদ সদস্য ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে যে তালিকা পাওয়া গেছে সেই তালিকা অনুযায়ীই ট্যাংকি বিতরণ করা হচ্ছে। আমাদের দুর্নীতির কোন সুযোগ নেই।

তার সাথে সুরে সুর মিলিয়ে কাজের ঠিকাদার প্রতিনিধি নজরুল ইসলাম বলেন, অফিস থেকে যে তালিকা দেয়া হয়েছে, সেই তালিকা অনুযায়ী আমরা ট্যাংকি বিতরণ করছি।
তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, খাবার পানি সংকটে থাকা প্রকৃত অসহায় দরিদ্র মানুষের পরিবর্তে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বিত্তবান ও চাকরিজীবীদের মাঝে অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে পানির ট্যাংকি বিতরণ করা হয়েছে।
অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ের ট্যাংকি পাওয়া বিত্তবান ও চাকরিজীবীদের দাবি, তিন হাজার লিটারের একটি পানির ট্যাংক দোকানে কিনতে গেলে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা লাগে। কিন্তু ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে শুনে তাদের কাছ থেকে ক্রয় করেছেন তাঁরা।

বঙ্গোপসাগরের সন্নিকটে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তবর্তী জেলা সাতক্ষীরার সর্বশেষ উপজেলা শ্যামনগর। সমুদ্রঘেঁষা হওয়ায় এই উপজেলার অধিকাংশ এলাকার পানি লবণাক্ত। তাই বসানো যায় না গভীর নলকূপও। বর্ষাকালে পানিতে লবণাক্ততা কম থাকলেও শুকনো মৌসুমে মানুষকে মারাত্মক কষ্ট পোহাতে হয়। দৈনন্দিন কাজকর্ম সারতে ও পান করতে তখন একমাত্র অবলম্বন পুকুর এবং ধরে রাখা বৃষ্টির পানি। অথচ সেই পানির কষ্টে থাকা উপকূলের গরীব অসহায় মানুষই পাচ্ছে না সরকারের এই সুবিধা। অর্থের বিনিময়ে সরকারের এই মহৎ উদ্যোগকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
উপকূলীয় অঞ্চলের সাধারণ মানুষের সুপেয় পানির কষ্ট দূর করতে সমগ্রদেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ ও উপকূলীয় জেলাসমূহে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে পানি সরবরাহ নামে দুইটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। এই প্রকল্পের আওতায় উপকারভোগীদের বাড়িতে তিন হাজার লিটার বৃষ্টির পানি ধারণক্ষমতার পানির ট্যাংক ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি স্থাপন করা হয়। এজন্য উপকারভোগীদের ১ হাজার ৫০০ টাকা হারে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হয়।
কিন্তু শ্যামনগরে এজন্য উপকারভোগীদের গুনতে হচ্ছে ১০ থেকে ১৭ হাজার টাকা পর্যন্ত। যা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ ঠিকাদারের প্রতিনিধি ও তার লোকজন নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ফলে প্রকৃত উপকারভোগীরা বঞ্চিত হলেও বিত্তবানরা ১২ থেকে ১৭ হাজার টাকার বিনিময়ে একের অধিক সরকারি ট্যাংক ক্রয় করছেন। অথচ ট্যাংকের গায়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সতর্কবার্তা হিসেবে লেখা আছে, ‘জলধারাটি ক্রয় ও বিক্রয় সমভাবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।